এ কোর্স শেষে-
পরিবেশ ও উপযোগিতা বুঝে স্বল্প ব্যয়ে নিরাপত্তা বজায় রেখে
বিভিন্ন রকমের গাছে গ্রাফটিং ও গুটিকলম করতে সক্ষম হব।
গ্রাফটিং (Grafting) বা জোড়কলমের গল্প
সেতু ও রিক্তা দুই বন্ধু। সেতুদের বাড়ি গাছগাছালিতে ভরা। রিক্তা তাদের বাড়িতে এলেই পুকুর পাড়ে আমবাগানের ছায়ায় এক্কা-দোক্কা, সাত গুটি, কানামাছি এসব খেলে। এ বছর ওদের পুকুরঘাটের গাছটায় অনেক আম ধরেছে, রংটাও বেশ জমে এসেছে। লোভ সামলাতে না পেরে সেতুর মায়ের অনুমতি নিয়ে রিক্তা আর বলু মিলে সেদিন গাছের ডালে উঠে কোঁচড় ভরে বেশ কয়েকটা আম পেড়ে আনল। তারপর বশু, হেনা, মিলনসহ সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খেয়ে বেশ তৃপ্তি পেল। অপূর্ব স্বাদের এই আম খেয়ে সবাই মুগ্ধ। এত সুস্বাদু আম রিক্তণ এর আগে কখনো খায়নি। কৌতূহলী হয়ে সেতুর কাছে জানতে চাইল, এটার বীজ বপন করলে আমাদের বাড়িতেও এমন সুস্বাদু আমগাছ হবে? করিম চাচা পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাদের কথা শুনে হেসে বললেন, 'শোনো, এ কাজে বীজও লাগবে না। তুমি চাইলে গাছটির ডাল কেটে নিয়ে তোমাদের কোনো টক আমগাছে লাগিয়ে দিলেও সেই গাছে এরকম মিষ্টি আম ধরবে। এর নাম হলো 'গ্রাফটিং'।
চিত্র ৯.১: সেতুদের বাড়ির আম বাগান
সবাই অবাক হয়ে বলল, 'তাই নাকি চাচা।
করিম চাচা শুরু করলেন, 'গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে যদি মিষ্টি বা সুস্বাদু জাতের একটি ডাল তোমাদের টক আমগাছে এনে জোড়া লাগিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তোমাদের গাছের জোড়া দেওয়া নতুন জাল থেকে ঠিক একইরকম সুস্বাদু ও মিষ্টি আম পাওয়া যাবে'।
রিক্তার অস্থিরতা বেড়ে গেল। বলল, 'চাচা, আপনি আগে আমাদের কথা দিন, কীভাবে এ কাজ করা যায় তা আমাদের শেখাবেন।'
তাদের কৌতুহল দেখে করিম চাচা একগাল হেসে বললেন, ঠিক আছে, তা না হয় শেখাব। কিন্তু তার আগে তোমরা ভেবে বলোতো এর সুবিধা কী?
বসু বললো, 'এটা তো সহজ কথা, বীজ থেকে গাছ হয়ে আম ধরা পর্যন্ত লম্বা সময় লাগে। গ্রাফটিং করলে আগে থেকেই গাছ থাকবে, বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।'
সেতু বলল, 'বসু ঠিক বলেছে, তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যাবে, তাই না চাচা!'
করিম চাচা বললেন,' হ! তাছাড়া এভাবে জোড় লাগানো গাছে মা গাছের প্রায় সব গুন ও স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে এবং চাইলে এর মাধ্যমে চারা তৈরি করে সারা দেশে উন্নত জাতের গাছ ছড়িয়ে দেওয়া যায়'।
রিজা বলল, 'বুঝেছি খুব, এবার তো আমাদের কাজটা শেখানো শুরু করেন, চাচা।'
করিম চাচা সবাইকে শেখানো শুরু করলেন। তিনি তাদের কী কী শেখালেন এবার সবাই জেনে নিই-
গ্রাফটিং বা জোড়কলমের পরিচয়
গ্রাফটিংয়ের আরেক নাম হলো জোড়কলম। জোড়কলমে দুটি গাছ লাগবে। একটি হলো- মাতৃগাছ অর্থাৎ যে গাছ থেকে ভাল নেওয়া হবে। অন্যটি হলো যে গাছে জোড়া লাগানো হবে সেই গাছ। আমরা যে গাছের সঙ্গে নতুন একটি ডাল এনে জোড়া লাগাব ঐ গাছটিকে আদিজোড় (rootstock) বলে। এখানে রিক্তাদের বাড়ির টক আমগাছে যদি সেতুদের মিষ্টি জাতের ভাল জোড়া লাগানো হয়, তাহলে রিক্তাদের টক আমগাছটি হলো আদিজোড়।
অন্যদিকে চাহিদাকৃত যে ভালটি এনে আদিজোড়ের সঙ্গে জোড়া লাগানো হবে তাকে উপজোড় বলে। এখানে সেতুদের মিষ্টি আমগাছ থেকে ডাল এনে রিক্তাদের টক আমগাছে জোড়া লাগানো হলে মিষ্টি আমগাছের ভালটি হলো উপজোড়। উপজোড়ের আরেক নাম হলো সায়ন (scion)।
চিত্র ৯.২: গ্রাফটিং (grafting)
গাছের আদিজোড় ও উপজোড় পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যখন একটি একক গাছ হিসেবে বড় হয়ে ওঠে, তখন এ প্রক্রিয়াকে জোড়কলম বা গ্রাফটিং বলে। সহজভাবে বলা যায়, জোড়কলমের জোড়া স্থানের নিচের অংশকে আদিজোড় এবং উপরের অংশ হলো উপজোড় বা সায়ন।
তোমরা নিশ্চয়ই গ্রাফটিং বা জোড়কলমের জন্য প্রয়োজনীয় আদিজোড় ও উপজোড় বুঝতে ও চিনতে পেরেছ। চাহিদা অনুযায়ী উপজোড় সংগ্রহ করে আদিজোড়ের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে নতুন চারা বা কলম তৈরি করা হয়।
কী কী গাছে গ্রাফটিং করা যায়
সাধারণত লেবু, আম, কাঁঠাল, সফেদা, কুল/বড়ই, গোলাপ ইত্যাদি গাছে এ ধরনের কলম বা গ্রাফটিং করা হয়। দ্বিবীজপত্রী সকল গাছেই গ্রাফটিং করা যায়। আদিজোড় ও উপজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে
আদিজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষনীয়
কোনো গাছের চারাকে যদি আদিজোড় (rootstock) হিসেবে নেওয়া হয়, তাহলে এর বয়স এক থেকে দেড় বছর হতে হবে। আবার যদি বড় গাছের একটি শাখাকে আদিজোড় হিসেবে নেয়া হয়, তাহলে উক্ত শাখার বয়সও এক থেকে দেড় বছর হতে হবে। তবে গোলাপের ক্ষেত্রে বয়স হবে তিন-চার মাস হতে হয়। গোলাপ গাছের ক্ষেত্রে ১ সে. মি. ডায়ামিটার হতে হবে।
উপজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষনীয়
উপযুক্ত সময়
বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস এই কলম করার উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ বর্ষার ঠিক আগে আগে জোড়কলম করার জন্য ভালো সময়।
কলম করার যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
কলম করার জন্য কিছু যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলো:
পলিব্যাগ | পলিথিন টেপ আদিজোড়ে উপজোড়কে স্থাপন করার পর জোড়ার স্থানকে শক্তভাবে মুড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়, যাতে জোড় স্থানে পানি না ঢোকে। |
গ্রাফটিং করি খাপে খালে
ক) আদিজোড় প্রস্তুতকরণ
সতর্কতা চাকু দিয়ে ভাল কাঁটার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্যই এই কাজের সময় বাড়ির বড় কাউকে সঙ্গে থাকতে হবে। |
খ) উপজোড় প্রস্তুতকরণ
সতর্কতা: চাকু দিয়ে ভাল কাঁটার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্যই এই কাজের সময় বাড়ির বড় কাউকে সঙ্গে থাকতে হবে। |
চিত্র ৯.৪: উপজোড় (scion)
গ) জোড়া লাগানো
চিত্র ৯.৫: উপজোড় (scion) |
চিত্র ৯.৬: আদিজোড় ও উপজোড় |
আন্তঃপরিচর্যায় যা করণীয়
জোড়কলদের সফলতার জন্য কয়েকটি বিষয়ের ওপর পুরুত্ব দিতে হবে-
চিত্র ৯.৭: আন্তঃপরিচর্যা
করিম চাচা তাদের ২/৩ দিন ধরে গ্রাফটিং হাতে-কলমে শেখালেন এবং অনেক অজানা তথ্য তাদের জানালেন। তিনি বললেন, 'মজার বিষয় হলো, আজকাল অনেকেই গ্রাফটিং করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে অনেক। উপার্জন করে থাকেন। কেউ কেউ আবার গ্রাফটিং করার ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে ছেড়ে দিয়েও অনেক আয় করেন। তোমরাও ইচ্ছা করলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন পেজ থেকে, গ্রাফটিং করা শিখতে পারো। আমাদের সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার অথবা উপজেলা কমপ্লেক্সে কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। তোমরা ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকেও সহায়ক পরামর্শ নিতে পারো। সরকারিভাবে তারা অনেক সময় এই ধরনের গ্রাফটিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। গ্রাফটিং শিখে তোমরা নিজেরাই এক গাছে নানা রঙের ফুল ফোটাতে পারবে, নিজের বা অন্যের নার্সারিতে সহায়তা করতে পারবে। স্থানীয় কোনো সাধারণ জাতের সঙ্গে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে অনেক উন্নত জাতের ফুল ও ফলের চারা তৈরি করা সম্ভব। ফলন ভালো হচ্ছে না এরকম কোনো গাছে তোমরা ইচ্ছা করলেই গ্রাফটিং করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে। তবে, মনে রাখবে একবার চেষ্টাতেই সবাই কাজটিতে সফল না-ও হতে পারো। এটা বিশেষ সূক্ষ্ম একটি কাজ, তাই কাজটি মনোযোগ দিয়ে ধৈর্য সহকারে বারবার অনুশীলন করে হাত পাকাপোক্ত করতে হবে।'
সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে করিম চাচার কথা শুনছিল। সেতু বলল, 'আচ্ছা, চাচা গ্রাফটিং ছাড়া আর কোনোভাবে কি কলম করা যায়?'
করিম চাচা বললেন, 'তা তো যায়ই! গুটিকলম নামে একধরনের কলম আছে, যা বেশ জনপ্রিয়।'
মিলন চাচার কথা শুনে বলল, 'আমরা গুটিকলমও শিখতে চাই, চাচা।'
চাচা হেসে বললেন, 'আচ্ছা ঠিক আছে। গুটিকলম আগামীকাল থেকে শেখাব।'
এরপর দিন থেকে করিম চাচা সবাইকে গুটিকলম শেখাতে শুরু করলেন।
গুটিকলমের সাথে পরিচয়
গুটিকলম দাবাকলনের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। গুটিকলম সাধারণত ফলগাছের বংশবিস্তারে ব্যবহৃত হয়।
মাতৃগাছে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় শাখা মাটিতে না নামিয়ে ভূমির ওপরে বায়ুমন্ডলে রেখে এ পদ্ধতিতে মূল সৃষ্টি করা হয় বলে একে বায়ব দাবাকলম বলে। পর্বসন্ধির ২/৩ সে. মি. নিচে শাখার বাকল উঠিয়ে ক্ষতস্থান পচা গোবরযুক্ত মাটি দ্বারা আবৃত করে গুটির আকারে বেঁধে সেই স্থানে মূল সৃষ্টি করা হয় এবং মূল সৃষ্টির পর মাতৃগাছ থেকে পৃথক করে সেটিকে নার্সারিতে লাগানো হয়। এজন্য একে গুটিকলমও বলে। দেশীয় বিভিন্ন রকম ফলের বংশবিস্তারে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
কী কী গাছে গুটিকলম করা যায়
পেয়ারা, লেবু, জামরুল, লিচু, ডালিম, করমচা, গোলাপজাম, জলপাই, কামিনী ইত্যাদি গাছে গুটিকলম করা যায়। সাধারণত ঝোপালো এবং কম উঁচু ফলগাছে বংশবিস্তারের জন্য গুটিকলম উপযোগী।
গুটিকলম করার উপযুক্ত সময়কাল
বৈশাখ-আষাঢ় মাস গুটিকলম করার উত্তম সময়।
গুটিকলমের ধাপসমূহ
১) সুস্থ-সবল ও নীরোগ শাখা নির্বাচন
২) নির্বাচিত শাখার বাকল তুলে ফেলা
৩) সবুজাভ আবরণ ভালোভাবে চাঁছা
৪) বুটিং মিডিয়াম তৈরি
৫) কাটা অংশে রুটিং মিডিয়ামের ব্যবহার ও পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে আবদ্ধ রাখা
৬) মূল উৎপাদন
৭) গাছ থেকে গুটি কেটে নিয়ে আসা
৮) নার্সারিতে চারা রোপণ ও পরিচর্যা
লিচু গাছের গুটিকলম করার পদ্ধতি:
লিচু গাছের কলম করার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। গুটিকলমের জন্য এক থেকে দুই বছর বয়সের শাখা চারা ব্যবহার করা উত্তম।
১. সুহ-সবল ও নীরোগ শাখা নির্বাচন
ক) ভূমির সমান্তরালে অবস্থান করা শাখা নির্বাচন
খ) এক থেকে দুই বছরের সুস্থ শাখা নির্বাচন
গ) ভালটির ব্যাস পেনসিলের মতো হতে হবে
চিত্র ৯.৮: শাখা বা ভাল নির্বাচন
২. নির্বাচিত শাখার বাকল তুলে ফেলা
কলম করার জন্য নির্বাচিত শাখাটির অগ্রভাগ থেকে ৩০-৫০ সে.মি. নিচে দুটি পর্বের মধ্যবর্তী অংশ একটু জীবাণুমুক্ত ছুরি দিয়ে গোল করে বাকল তুলে ফেলতে হয়। গিঁটের কাছাকাছি অংশে শিকড় তাড়াতাড়ি গজায়।
সতর্কতা:
ছুরি দিয়ে বাকল তুলে ফেলার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্যই এই কাজের সময় বাড়ির বড় কাউকে সঙ্গে রাখতে হবে।
চিত্র ৯.৯: শাখার বাকল তোলা
৩. সবুজাভ আবরণ ভালোভাবে চাঁহ্য
কাটা অংশের সেলুলোজ অঞ্চলের সবুজাভ আবরণ ভালোভাবে চেঁছে ফেলতে হবে। এতে ক্যাম্বিয়ামের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ক্যাম্বিয়াম স্তর না তুলে ফেললে এর শিকড় গজাবে না।
চিত্র ৯.১০: সবুজাভ আবরণ চেঁছে দেওয়া
৪. রুটিং মিডিয়া প্রযুক্তি
কলম করার জন্য রুটিং মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। রুটিং মিডিয়া কলমকালীন অবস্থায় শাখাকে পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। কলম করার জন্য যেসব রুটিং মিডিয়ামের প্রয়োজন-
ক) ৫০% এঁটেল-দোআঁশ মাটি
খ) ৫০% গোবর সার
গ) নারিকেলের ছোবড়া/গুঁড়া
এগুলো একসঙ্গে মিশ্রিত করে নিতে হবে।
চিত্র ৯.১১: রুটিং এর সামন্ত্রী
৫. কাটা অংশে রুটিং মিডিয়ামের ব্যবহার ও চট/পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে আবদ্ধ রাখা
শিকড় মাধ্যম (rooting medium) মিশ্রণ দ্বারা ক্ষতস্থানটিকে অর্থাৎ গাছের কাটা অংশের চারদিকে ঢেকে দেওয়ার পর ২০ সে.মি. লম্বা ও ১০ সে.মি. চওড়া চট/পলিথিন ও সুতা দিয়ে বেঁধে দিতে হবে, যাতে এটি একটি গুটি আকৃতি ধারণ করে।
গুটি সব সময় ভিজা রাখতে হবে। তাই চট দ্বারা গুটি তৈরি করলে নিয়মিতভাবে গুটিতে পানি দিতে হবে। পক্ষান্তরে পলিথিন কাগজ দ্বারা গুটি বেঁধে দিলে আর পানি দেওয়ার ঝামেলা পোহাতে হয় না। পলিথিন কাগজের একটি সুবিধা হলো, এর ভেতর দিয়ে গুটির ভেতরে গজানো শিকড়ের অবস্থা সহজে বোঝা যায়।
চিত্র ৯,১২: পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে আবদ্ধ রাখা
৬. শিকড় গজানো/মূল উৎপাদন
গুটিকলম থেকে শিকড় গজাতে প্রজাতির প্রকারভেদে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় নেয়। সাধারণত এ পদ্ধতিতে শিকড় গজাতে দুই-তিন মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। কিছু প্রজাতির গাছে শিকড় গজানো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রুটিং হরমোন ব্যবহার করা যেতে পারে। কলমের কাটা প্রান্তে রুটিং হরমোন (যেমন IBA, NAA ইত্যাদি) প্রয়োগ করতে হবে।
চিত্র ৯.১৩: খুঁটিতে শিকড় গজানো
৭. গাছ থেকে গুটি কেটে নিয়ে আসা
শিকড়ের রঙ খয়েরি বা তামাটে হলে গুটির ২.৫ সে. মি. নিচে দুই থেকে তিন ধাপে কেটে কলমকে মাতৃগাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই বিচ্ছিন্ন কলম করা ভালটি গুটিসহ কেটে এনে ছায়াময় স্থানে তৈরি বীজতলায় বা নার্সারি বেডে চার-পাঁচ সপ্তাহ সংরক্ষন করার পর গাছটি লাগানোর উপযোগী হয় এবং অন্যত্র লাগাতে হবে।
চিত্র ৯.১৪: গাছ থেকে পুঁটি কেটে আলাদা করা
৮. চারা রোপণ ও পরিচর্যা
কলম করা চারাটি বীজতলায় বা নার্সারি বেড থেকে গর্তে লাগানো হয়। এ জন্য আগে থেকেই গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্ত তৈরি এবং চারা রোপণপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ষষ্ঠ শ্রেণির 'জীবন ও জীবিকা' বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গর্তে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণ থেকে এর সঠিক পরিচর্যা নিতে হবে। পরিচর্যা নিয়েও ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে আলোচনা করা হয়েছে যা অনুসরণ করে পরিচর্যা কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
চিত্র ৯.১৫: মাটিতে পুঁটি রোপন
শিক্ষকের সহায়তায় পুরো প্রক্রিয়াটি আমরা দুই-তিন বার অনুশীলন করব। আমরা ইচ্ছা করলে সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার, সরকারি সামাজিক বনায়ন নার্সারি কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (BADC)-এর নার্সারি অথবা বেসরকারি নার্সারির সহায়ক পরামর্শ নিতে পারি।
এই কলমপ্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ পদ্ধতি, অল্প সময়ে বহুসংখ্যক গাছের চারা উৎপাদন করা যায়, কলম করা চারায় বীজপদ্ধতির চেয়ে স্বল্প সময়ে ফল ধারণ করে, যেসব প্রজাতি কাটিংয়ে সহজে শিকড় গজায় না তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহারোপযোগী।
সেতু, বন্ধু, মিলন ও রিক্তা প্রত্যেকেই নিজেদের টবে কিংবা বাগানে একটা করে গাছে গ্রাফটিং করেছে। তবে মিলন ও রিক্তা গুটিকলমও করেছে কয়েকটি গাছে। ওরা এগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছে। খুব শিগগির তারা ফলন দেখতে পাবে। আর ফলনের ফল খেয়ে দেখার আগাম নিমন্ত্রণ তারা করিম চাচাকে জানিয়ে রেখেছে। এবার শুধু খুশি মনে অপেক্ষার পালা।
স্বমূল্যায়ন
ক. তোমরা গ্রাফটিংয়ের কাজ করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলবে অথবা এখানে দেওয়া বক্সগুলোতে এঁকে রাখবে। সেগুলো শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিন ক্লাসে এনে দেখাবে। যদি ছবি প্রিন্ট করার সুযোগ পাও, তাহলে একটি সাদা কাগজে প্রিন্ট দিয়ে কেটে এখানে লাগিয়ে দাও।
আদিজোড় গাছ | উপজোড় গাছ |
যেভাবে আদিজোড় কেটেছি | যেভাবে উপজোড় কেটেছি |
যেভাবে একটির খাঁজে আরেকটি জোড়া গেঁথেছি | জোড়া লাগানো অবস্থা |
পরবর্তী অবস্থা | অভিভাবকের মতামত |
খ. তোমরা গুটিকলম করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলবে অথবা এখানে দেওয়া বক্সগুলোতে এঁকে রাখবে। সেগুলো শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিন ক্লাসে এনে দেখাবে। যদি ছবি প্রিন্ট করার সুযোগ পাও, তাহলে একটি সাদা কাগজে প্রিন্ট দিয়ে কেটে এখানে লাগিয়ে দাও।
নির্বাচিত শাখা | শাখার বাকল তোলা |
শাখার সবুজ আবরণ তোলা | কাঁটা অংশ প্যাচানো অবস্থায় |
গাছ থেকে গুটি কাটা | চারা রোপন |
পরবর্তী অবস্থা | অভিভাবকের মতামত |
কাজটি করতে গিয়ে আসার অনুভূতি
(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী শিখেছো তা এখানে লেখো।)
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
শিক্ষকের মন্তব্য:
____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
Read more